নজিরবিহীন নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে কাল শুক্রবার। দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলবী অনুসারিরা অংশ নিবেন এ পর্বে।
দ্বিতীয় পর্ব শুরুর প্রথম রাত পবিত্র শবেবরাতের রাত হওয়ায় ইজতেমা ময়দানে বড় করে শবেবরাত পালনের মাধ্যমে অধিক সওয়াব হাসিলের লক্ষে মুসল্লিরা ময়দানে এসে অনেকে জড়ো হচ্ছেন, আরও আসছেন। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বিতীয় পর্বের আয়োজকরা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সরজমিনে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী তুরাগ নদের তীরের বিশাল ময়দানে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। ময়দান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও শেষ।
প্রথম পর্বের লাখো মুসল্লির ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট, কাগজ, পলিথিন, বিছানার হোগলা ইত্যাদি পরিস্কার করা হয়েছে। ঝাড়-মুছ করা হয়েছে ১৬০ একর ময়দানে তৈরী সুবিশাল সামিয়ানার নিচ। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে তৈরি করা হাজার হাজার কাঁচা-পাকা বাথ রুম, ওজু-গোসল ও রান্না-বান্নার স্থান ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ছিড়ে যাওয়া, খসে পড়া চট ঠিক করে বাধাসহ নতুন করে সাজিয়েছে।
পুরো ময়দানকে ৮৫ খিত্তায় সাজানো হয়েছে। এসব কাজগুলো ময়দান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও জামাতবন্দী মুসল্লিরা স্বেচ্ছাশ্রমে করেছেন। ময়দানের যেসব জায়গায় সামিয়ানা টানানো হয় নাই সেসব জায়গার সামিয়ান সংশ্লিষ্ট খিত্তার মুসল্লিরা নিয়ে আসবেন।
জানা যায়, গতকাল বুধবার বিকাল থেকেই শুরু হয়েছে ইজতেমা ময়দানমুখো মুসল্লিদের আগমন। ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে, যানজট এড়াতে আশপাশের এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে, নৌ পথে ও আকাশ পথে (বিদেশী মেহমান) ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে সমবেত হচ্ছেন। গত পর্বের ন্যায় এবারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সমাগমে শিল্পশহর টঙ্গী যেন জনসমুদ্রে পরিণত হতে চলেছে।
ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লির সমাগমকে কেন্দ্র করে টঙ্গী, উত্তরা, তুরাগ, কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভাসমান দোকানপাট ও হোটেল-রেস্তোরাঁ। কাল শুক্রবার থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও আজ বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান শুরু হবে।
আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি মাওলানা ও বুজুর্গ মুরুব্বিরা বিভিন্ন ভাষায় পর্যায়ক্রমে মূল্যবান বয়ান করবেন। রবিবারের আখেরি মোনাজাতে ২০/২৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের ধারণা।
এদিকে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা যেভাবে পরিচালিত হয়েছে একইভাবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমাও পরিচালিত হবে বলে ইজতেমা পরিচালনা কমিটিসহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, আইন-শৃঙ্খখলা বাহিনী- র্যাব, পুলিশ, সিটিএসবিসহ বিভিন্ন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে। ইজতেমা চলাকালীন ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা আগের মতোই থাকবে বলেও জানা গেছে।
শেরপুর জেলার শ্রবরদী এলাকার মুসল্লি মো. বেলাল জানান, সবেবরাতের মধ্যেই ইজতেমা শুরু। তাই আগেই ময়দানে আসলাম। বেশী আমল করে যেন বেশী সওয়াব অর্জন করতে পারি।
মাওলানা সাদ অনুসারি মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে নিজামউদ্দিন মারকাজের বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমার প্রথম রাতে পবিত্র শবেবরাত হওয়ায় লাখ লাখ মুসল্লিসহ আমরা ইজতেমা ময়দানে পবিত্র শবেবরাত পালন করব। তাই আজ (গতকাল) রাতের মধ্যেই মুসল্লিদের আগমনে ময়দান ভরে যাবে ইনশাল্লাহ। ইজতেমার প্রস্ততি কাজ প্রায় শেষ।
আগামীকাল (আজ) বাদ ফজর থেকেই বয়ান শুরু হবে। যেসব মুসল্লিরা ময়দানে সমেবত হয়েছেন তারা যাতে আমলে থাকেন সে ইদ্দেশ্যে বয়ান হবে বাদ যোহর। বাদ আসর আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশের কয়েক হাজার বিদেশী মেহমান ইজতেমায় অংশগ্রহন করবেন বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, মাওলানা জুবায়ের আহমদ পন্থিদের আয়োজনে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বের দুই ধাপে ইজতেমা সম্পন্ন হয়। কাল শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এপর্বে মাওলানা সা’দ আহমদ কান্ধলভী অনুসারি মুসল্লিরা অংশ নিবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব তথা বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর। (সূত্র : দৈনিক ভোরের ডাক)