নেত্রকোনার পূর্বধলায় ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তিনজনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে জহিরুল (২২) ও মাফিয়া আক্তার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। অন্য দিকে ট্রাকের চাপায় ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার ১১ জানুয়ারি দুপুর ২:৩০ টা থেকে ররিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ।
তিনি জানান, উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নে জহিরুল ও আগিয়া ইউনিয়নের হাটকান্দা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লড়ি ট্রাক চালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী মাফিয়া আক্তারের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় পূর্বধলা থানায় দুটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এছাড়া উপজেলা সদরের নসীবপুর গ্রামের ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) এবং তার মেয়ে ফাতিন (২০) ঘটনাস্থলে মারাত্বক ভাবে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) মারা যায়। ফেরদৌস আহম্মেদ লাশ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এবিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াদিন।
শনিবার দুপুরে পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নে জহিরুল (২২) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জহিরুল নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত। দুপুরের সময় তার দাদির কাছে টাকা চাইলে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জহিরুল বাড়ীর সামনে রাখা সিমেন্টের একটি কুটি বিক্রি করে দেয়। তখন তার পাশের বাড়ির সম্পর্কে নানা মো: আজিজুল (৪৮) জহিরুল গালাগালি করে। এতে সে রাগে দরজা বন্ধ করে রাখে। দাদী হালিমা খাতুন দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে দেখে ভিকটিম জহিরুল ঘরের বাশের আড়ার সাথে লাল ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে।
এদিকে গত রাত ৩ ঘটিকার উপজেলা সদরের ইউনিয়নের নসীবপুরে দারুল উলুম নোমানিয়া নও-মুসলিম মাদ্রাসা সামনে সড়কে নেএকোনা থেকে পূর্বধলা গামী বালুর ট্রাক (চট্রঃমেট্রো-১১-৫২৫৬) পিছন দিক থেকে বেপরোয়া ভাবে মটরসাইকেল (নেএকোনা- হ-১২-০৪৫৯) ধাক্কা দিলে মোটরসাইকেলে থাকা ফেরদৌস আহম্মেদ (৫৪) এবং তার মেয়ে ফাতিন (২০) ঘটনাস্থলে মারাত্বক ভাবে আহত হয়। তাৎক্ষণিক স্থানীযরা বাবা ও মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ফেরদৌস আহমেদকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোর রাতে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় মেয়ে ফাতিন (২০) বতমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ফেরদৌস আহমেদের লাশ বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে বালুর ট্রাক এবং ড্রাইভারকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
অপরদিকে উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের হাটকান্দা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লড়ি ট্রাক চালক দ্বীন ইসলামের স্ত্রী মাফিয়া আক্তার (২০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জানা গেছে, ২ বছর আগে বিবাহে আবদ্ধ হন মাফিয়া ও দ্বীন ইসলাম। বিয়ের ১ম বছরের মাথায় মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এবার আবারও তিন মাস অন্ত:সত্ত্বা ছিলো মাফিয়া। স্বামী দ্বীন ইসলামের সাথে মাফিয়া পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। গতরাতে স্বামী লড়ি ট্রাক চালিয়ে রাত ৩ ঘটিকার সময় বাড়িতে এসে ঘরের দরজা ধাক্কা দেয় এবং ডাকাডাকি করলে সাড়া না দিলে দরজার সাথে রশির বাঁধন কেটে ঘরে ঢুকে দেখে ধরনার সাথে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে স্ত্রী মাফিয়া। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার থানায় নিয়ে আসে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা উপজেলার মেঘশিমুল গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান জানান, ২ বছর আগে আমার মেয়ে মাফিয়া আক্তারের সঙ্গে দ্বীন ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। বিয়ে দেওয়া পর থেকেই জামাই বিভিন্ন দাবি দাওয়া করে। আমি গরীব মানুষ টাকা পয়সা না দিতে পারায় কারনে মেয়েকে আমি বাড়িতে আসতে দিতো না। মেয়েকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতো৷ যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে পরিকল্পনাভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা নাটক সাজিয়েছে। এব্যাপারে আমি থানায় মামলা করবো।